দীর্ঘদিন ধরে চট্টগ্রামের আনোয়ারা উপজেলার ইছামতি নদীরপাড় ও বিলের জাল ও বিষটোপ দিয়ে অবাধে চলছে পাখি শিকার। প্রতিবছরে মতো এবারও দেশি জাতের বিভিন্ন প্রজাতির পাখির আনাগোনা বেড়েছে উপজেলার বিভিন্ন এলাকায়।
নদীরপাড়ে, বিলের ফসলের চাষাবাদ ও পানি দেওয়ার সময় সাদা বক, শালিক, চড়–ই, বাবুই, ডাহুক, ঝুটকুলিসহ বিভিন্ন দেশি প্রজাতির পাখি মাটির নিচে থেকে উঠে আসা পোকামকড়সহ বিভিন্ন কিটপতঙ্গ খেতে জড়ো হয়। আর এই সুযোগে এক শ্রেণির অসাধু পাখি শিকারিরা অবাধে পাখি নিধনে ব্যস্ত হয়ে পড়েন। জাল-বিষটোপের ফাঁদে পাখিগুলো ধরে কাছে থাকা ব্লেড বা ছুরি দিয়ে জবাই করে বিক্রি করে জেলা ও উপজেলার বিভিন্ন রেস্টুরেন্টে।
বুধবার দুপুরে আনোয়ারা থানা পুলিশের একটি টিম গোপন সংবাদের ভিত্তিতে আনোয়ারা সদর এলাকায় উপজেলার ইছামতী নদীর বিল থেকে বিভিন্ন প্রজাতির ৭ শতাধিক পাখি শিকার ও হত্যা করে বস্তায় নিয়ে যাওয়ার সময় তিনজনকে গ্রেপ্তার করে। এসময় তাদের কাছ থেকে জবাইকৃত ১৩৫টি শালিক, ৪২২টি চড়–ই এবং ১৪০টি বাবুই পাখিসহ ৬৯৭টি জবাইকৃত পাখি জব্দ করেছে বলে নিশ্চিত করেন থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মনির হোসেন।
গ্রেপ্তারকৃতরা হলো- মো. ছৈয়দুল আলম (৬০), মো. ইদ্রিস (৬৫) ও শামসুল মো. সোহেল (৩০)। তিনজনই পটিয়া উপজেলার শোভনদন্ডী ইউনিয়নের আজম উল্লাপাড়া এলাকার বাসিন্দা।
পুলিশ জানায়, ওই তিন ব্যক্তি কয়েকদিন ধরে আনোয়ারার ইছামতি নদীর আশপাশের এলাকা থেকে এসব পাখি শিকার করেছেন। এরপর এসব পাখি জবাইয়ের পর তিনটি বস্তায় ভরা হয়। বস্তা তিনটি নিয়ে একটি সিএনজি অটোরিক্সায় তাঁরা চট্টগ্রাম নগরের দিকে যাচ্ছিলেন। খবর পেয়ে তাঁদের গ্রেপ্তার করা হয়।
স্থানীয়রা জানান, নদী ও বিলের অনেক পাখি দেখা যাচ্ছে। এসময়ে নদী-নালা, খাল বিলের পানি কমতে থাকে। এ সময় ধানের জমিতে ছোট মাছ ও পোকা খেতে ছুটে আসে বিভিন্ন প্রজাতির পাখি। এসব পাখি শিকারে এক শ্রেণির অসাধু লোকজন ব্যস্ত হয়ে পড়েছে শিকারে। পাখি শিকারের ফলে পরিবেশের উপর বিরুপ প্রভাব পড়তে পারে। পাখি শিকার বন্ধ করতে থানা পুলিশের পাশাপাশি বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগকেও এগিয়ে আসতে হবে।
ওসি মো. মনির হোসেন বলেন, ‘আটকৃতদের বিরুদ্ধে বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ আইনে মামলা শেষে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। জবাইকৃত পাখি গুলোর বিষয়ে আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করা হয়েছে, আদালতের আদেশের প্রেক্ষিতে বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগ চট্টগ্রাম বা আনোয়ারা উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তার মাধ্যমে পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’
ওসি মো. মনির হোসেন আরও বলেন, ‘শিকারীরা জাল-বিষটোপ দিয়ে শিকার শেষে জবাই করে বস্তা বন্দি করেছে বলে আমাদের জানিয়েছে। তারা আরও জানিয়েছে পাখি শিকারের পর ঘরে গিয়ে পাখির শরীর থেকে পালক তুলে ফেলে চট্টগ্রাম নগরীসহ বিভিন্ন হোটেল রোস্টুরেন্টে বিক্রি করে।’