আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্স প্রদান , নবায়ন ও ব্যবহার নীতিমালা ২০১৬-এর ধারা ৩-এ ব্যক্তিগত আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্স দেয়ার ক্ষেত্রে ব্যক্তির যোগ্যতা সম্পর্কে যা যা বলা হয়েছে, তার মধ্যে রয়েছে-
১.বাংলাদেশের নাগরিক হতে হবে ২. শারীরিক ও মানসিকভাবে সমর্থ ৩০-৭০ বছর বয়স সীমার মধ্যে হতে হবে ৩. ব্যক্তিশ্রেণির করদাতা হতে হবে। ৪.পিস্তল, রিভলবার, রাইফেল-এর ক্ষেত্রে আবেদনের পূর্ববর্তী তিন বছর ধরে বছরে কমপক্ষে তিন লাখ টাকা করে কর দিতে হবে। শটগানের ক্ষেত্রে কমপক্ষে এক লাখ টাকা।
এছাড়া প্রবাসী ও দ্বৈত নাগরিকের ক্ষেত্রে আরো কিছু শর্ত আছে।
তবে নীতিমালার ৩২ ধরায় বিশেষ প্রাধিকার পাবেন এরকম ১০ ধরনের ব্যক্তিদের কথা বলা আছে। তাদের মধ্যে স্পিকার, ডেপুটি স্পিকার, মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী, উপমন্ত্রী ও সমপদমর্যাদা সম্পন্ন ব্যক্তিরা রয়েছেন। আরো আছেন সংসদ সদস্য, সিটি কর্পোরেশনের মেয়র, ‘ক’ শ্রেণির পৌরসভার চেয়ারম্যান, জেলা ও উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যন, বিচারপতি। এছাড়া নির্ধারিত গ্রেডের সরকারি কর্মকর্তা, সামরিক কর্মকর্তা, জাতীয় দলের শ্যুটারসহ আরো কিছু বিশেষ ব্যক্তিও রয়েছেন সেই তালিকায়। এই ১০ ধরনের ব্যক্তির মধ্যে স্পিকার, ডেপুটি স্পিকার, মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী, উপমন্ত্রী ও সমপদমর্যাদারসহ ৯ ধরনের ক্ষেত্রে কমপক্ষে ৩০ বছর বয়সের বাধ্যবাধকতা নেই। তাদের ক্ষেত্রে আয়কর পরিশোধের বাধ্যবাধকতাও নেই।
এর বাইরে লংব্যারেল (শটগান) আগ্নেয়াস্ত্রের ক্ষেত্রে সর্বনিম্ন বয়স ২৫ বছর করা হয়েছে বলে জানান একজন জেলা প্রশাসক। এছাড়া রাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (রাজনৈতিক ও আইসিটি অনুবিভাগ) খন্দকার মো. মাহাবুবুর রহমান ডয়চে ভেলেকে বলেন, “বিশেষ ক্ষেত্রে ২৫ বছরেও আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্স দেয়ার বিধান আছে।
আসিফ মাহমুদের বিষয়ে প্রশ্ন
ব্যতিক্রমের সুযোগ থাকা সত্ত্বেও এখন কয়েকটি প্রশ্ন সামনে এসেছে। উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ বলেছেন, তার লাইসেন্স করা আগ্নেয়াস্ত্র আছে। প্রশ্ন হলো:
১. তিনি কোন ধরনের আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্স নিয়েছেন?
২. কোন সময়ে নিয়েছেন?
৩. বিমানবন্দরে যে ম্যাগাজিন ধরা পড়েছে, তা পুলিশ হেফাজতে নিয়ে পরীক্ষানিরীক্ষা না করেই কেন তার প্রটোকল অফিসারকে দেয়া হলো?
উড়োজাহাজে বৈধ অস্ত্র হ্যান্ড ব্যাগে বহনের নিয়ম নেই। তবে ঘোষণা দিয়ে বদ্ধ লাগেজ হিসাবে বহন করা যায়। পুলিশের সাবেক ডিআইজি খান সাঈদ হাসান ডয়চে ভেলেকে বলেন, “সাধারণ নিয়মে এই ধরনের ঘটনায় ম্যাগাজিনটি জব্দ করে বৈধতা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে মালিককে ফেরত দেয়ার কথা। কিন্তু আসিফ মাহমুদ একজন উপদেষ্টা। আর আমার মনে হয় তিনি নিশ্চয়ই বৈধ কাগজপত্র দেখিয়েছেন। সেই কারণে তার প্রটোকল অফিসারের কাছে ম্যাগাজিনটি ফেরত দেয়া হয়েছে।”
তবে ওই ম্যাগাজিন কোন ধরনের আগ্নেয়াস্ত্রের সে বিষয়ে বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ নিশ্চিত নয়। তারা কাগজপত্র পরীক্ষা করেও দেখেননি। এই সব প্রশ্নের জবাব পেতে চায় তারা।
হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের নির্বাহী পরিচালক গ্রুপ ক্যাপ্টেন এস এম রাগীব সামাদ ডয়চে ভেলেকে বলেন, “আমরাও বিষয়টি খতিয়ে দেখছি। ওই সময়ে ইমিগ্রশনে কারা দায়িত্বে ছিলেন, তারা কী প্রক্রিয়ায় ফেরত দিয়েছেন- সব কিছু জানার চেষ্টা করছি।
যেভাবে অস্ত্র ও লাইসেন্স নিয়ে বিতর্ক
হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে রবিবার (২৯ জুন) সকালে যুব ও ক্রীড়া এবং স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজিব ভূঁইয়ার ব্যাগ থেকে গুলির ম্যাগাজিন উদ্ধার করা হয়। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এ নিয়ে দিনভর আলোচনা ও সমালোচনার ঝড় বয়ে যায়। একটি সংবাদমাধ্যম এ বিষয়ে তখন খবর প্রবাশ করেও খুব অল্প সময়ের মধ্যেই তা সরিয়ে ফেলে।
রবিবার রাতে নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুকে এক পোস্টে ব্যাগে ম্যাগাজিন পাওয়ার বিষয়ে ব্যাখ্যা দেন উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ। তিনি সেখানে বলেন,‘‘নিরাপত্তার স্বার্থে আমার লাইসেন্স করা বৈধ অস্ত্র আছে। গণঅভ্যুত্থানের নেতৃত্বের ওপরে কয়েক দফায় যেভাবে হত্যাচেষ্টা চালানো হয়েছে, তাতে অস্ত্র রাখাটাই স্বাভাবিক। যখন সরকারি প্রোটোকল বা সিকিউরিটি থাকে না, তখন নিজের এবং পরিবারের নিরাপত্তা নিশ্চিতের উদ্দেশ্যে লাইসেন্সড অস্ত্র রাখা।”
তিনি আরো লিখেছেন, ‘‘মরক্কোর মারাকেশে অনুষ্ঠিতব্য ওআইসি ইয়ুথ ক্যাপিটাল ইন্টারন্যাশনাল প্রোগ্রামে অংশগ্রহণের জন্য আজ (রবিবার) ভোর ৬টা ৫০ মিনিটে ফ্লাইট ছিল। ভোরে প্যাকিং করার সময় অস্ত্রসহ একটা ম্যাগাজিন রেখে এলেও ভুলবশত আরেকটি ম্যাগাজিন ব্যাগেই থেকে যায়, যেটা স্ক্যানে আসার পর আমার প্রোটোকল অফিসারের কাছে হস্তান্তর করে আসি। বিষয়টি সম্পূর্ণ আনইন্টেনশনাল। শুধু ম্যাগাজিন দিয়ে আমি কী করবো ভাই? ইন্টেনশন থাকলে অবশ্যই অস্ত্র রেখে আসতাম না। এখানে অবৈধ কিছু না থাকলেও অনেকের জন্যই এটা আলোচনার খোরাক বটে।”
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ওঠা চাপ দিয়ে নিউজ সরানোর অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা দাবি করে উপদেষ্টা বলেন, ‘‘এই ঘটনার পর আমি টিমসহ টানা ১০ ঘণ্টা ফ্লাইটে ছিলাম। ট্রানজিটে নেমেও দীর্ঘক্ষণ পর অনলাইনে এসে দেখতে পাচ্ছি, এত কিছু ঘটেছে। নাগরিক হিসেবে আপনারও যদি নিরাপত্তা-ঝুঁকি থাকে, যথাযথ নিয়ম মেনে আপনিও অস্ত্রের লাইসেন্স করতে পারেন।”