জুলাইয়ের সেই রক্তভেজা সকালটা আজও ঘুম ভাঙায় বিচারহীনতার যন্ত্রণায়। আর এই বিপ্লব শুরু হয়েছিল একটি প্রশ্ন দিয়ে—কেন মেধা হারিয়ে যাবে একটি ভেঙে পড়া ব্যবস্থার নিচে? কেন একটি জাতির ভবিষ্যৎ নির্ধারিত হবে যোগ্যতা নয়, বরং বিশেষ সুবিধাভোগীদের মাধ্যমে? এখান থেকেই শুরু হয়েছিল ছাত্রদের বৈষম্যমূলক কোটাবিরোধী আন্দোলন।
হাজার হাজার তরুণ-তরুণী নেমে এসেছিল রাজপথে—ক্ষমতার জন্য নয়, রাজনীতির জন্য নয়, বরং ন্যায়ের জন্য। তারা স্লোগান তুলেছিল ব্যক্তিগত স্বার্থে নয়, একটি ন্যায্য ভবিষ্যতের স্বপ্নে।
কিন্তু তাদের প্রত্যুত্তর কী ছিল?
টিয়ার গ্যাস, রাবার বুলেট, গুম, পুলিশি নির্যাতন। মিডিয়া নিস্তব্ধতা। মিথ্যা মামলা।
ঢাকা সহ বিভাগীয় শহরগুলোর সরকারি-বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়-কলেজ-স্কুলের ক্লাসরুম থেকে শুরু করে দেশের প্রান্তিক সরকারি-বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়-কলেজ-স্কুলের ক্লাসরুম পর্যন্ত এক অগ্নিশিখা জ্বলে উঠেছিল—একটি ভয়ংকর অগ্নিশিখা, যা আর ভয়ের মাধ্যমে নিভিয়ে রাখা যায়নি।কারণ তরুণ প্রজন্ম বুঝে গিয়েছিল:
সমস্যা শুধু কোটা নয়।
সমস্যা পুরো ব্যবস্থায়।
সমস্যা ছিল ফ্যাসিস্ট শাসনব্যবস্থায়।
সমস্যা ছিল হাসিনা-তন্ত্রে।
এই আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ে কোটার সীমা ছাড়িয়ে সার্বজনীন অবিচারের বিরুদ্ধে:
* জালিয়াতিপূর্ণ নির্বাচন
* গুম-খুন ও নিখোঁজ হওয়ার সংস্কৃতি
* রাষ্ট্রীয় মদদে সহিংসতা
* মেগা প্রকল্পের নামে চুরি
* বেকারত্ব, মূল্যস্ফীতি, দুর্নীতি, ও মিথ্যাচার
এই বিপ্লবের রূপান্তর ঘটে “কোটা সংস্কার চাই” থেকে “ফ্যাসিস্ট হাসিনার পদত্যাগ চাই”-এ।
ধীরে ধীরে ক্ষীণ ফিসফাস থেকে রূপ নেয় এক নির্ভীক দাবিতে:
“পদত্যাগ করো শেখ হাসিনা। এখনই পদত্যাগ করো।”
সারা দেশের রাজপথ মুখর হয়ে ওঠে এমন একটি প্রজন্মের গর্জনে—
যাদের হারাবার আর কিছু নেই।
তারা আর দাস হয়ে বাঁচতে রাজি নয়।
তারা ভয় প্রত্যাখ্যান করেছে।
তারা নিস্তব্ধতা প্রত্যাখ্যান করেছে।
তারা স্বৈরতন্ত্রের ছদ্মবেশী গণতন্ত্র প্রত্যাখ্যান করেছে।
এটি একটি ছাত্র-জনতার বিপ্লব:
এটি শুধুই স্লোগানে লেখা নয়, বিসর্জনের অক্ষরে লেখা এক আন্দোলন। যা শুরু হয়েছিল ছাত্রদের দ্বারা, কিন্তু এখন প্রতিটি শ্রমিক, মা, কৃষক, রিকশাওয়ালা আর দোকানদারের—যে তার নিজের মর্যাদার স্বপ্ন দেখে।
* আমরা সংস্কার চাই না। আমরা সরিয়ে দিতে চাই।
* আমরা দুঃখপ্রকাশ চাই না। আমরা জবাবদিহিতা চাই।
* আমরা ছদ্মবেশী স্বৈরতন্ত্র চাই না। আমরা সত্যিকারের গণতন্ত্র চাই।
ইতিহাস মনে রাখুক:
-এই বিপ্লব শুরু হয়েছিল কোটা নিয়ে প্রশ্ন তোলার মাধ্যমে।এটি শেষ হয়েছে ন্যায়বিচার, স্বাধীনতা এবং ফ্যাসিবাদের পতনের মাধ্যমে✊🔥
৩৬ জুলাই- বিপ্লবী রক্ত বন্যা:
৩৬ জুলাই—একটি তারিখ, যা ক্যালেন্ডারে নেই, কিন্তু আমাদের হৃদয়ে তা গভীরভাবে খোদাই করা আছে—শোক, প্রতিরোধ এবং অনন্ত বেদনার প্রতীক হিসেবে।
এটি কেবল একটি দিনের কথা নয়,এটি আমাদের সেরা ছাত্রদের হারানোর চিরন্তন যন্ত্রণার গল্প: আমাদের সন্তান, ভাই-বোন, ভবিষ্যৎ নেতৃত্ব—যাদের কেড়ে নিয়েছিল এক স্বৈরাচারী সরকার, যারা বিশ্বাস করেছিল সহিংসতা দিয়ে সত্যকে চুপ করানো যায়।
-তাদের অপরাধ কী ছিল?
-তারা ন্যায়বিচার চেয়েছিল।
-তারা রাস্তায় নিরাপত্তা চেয়েছিল।
-তারা পোস্টার ধরেছিল, অস্ত্র নয়।
-তারা গলা তুলেছিল, সন্ত্রাস নয়।
**ফ্যাসিস্টদের জবাব ছিল—লাঠিচার্জ, গুলি,ভাম বর্বরতা প্রকাশের মধ্যদিয়ে।
আমাদের সন্তানদের হত্যা করা হয়েছিল—
-এটি কোনো দুর্ঘটনা ছিল না, কোনো বিশৃঙ্খল পরিস্থিতির ফসল ছিল না।
-এটি ছিল পরিকল্পিত হত্যা, একটি প্রজন্মকে নি:শেষ করার চেষ্টা।
-তাদের রক্ত রঞ্জিত করেছে আমাদের শহরের রাজপথ, আর আমাদের জাতির বিবেক। কিন্তু আজও নেই কোনো ন্যায়বিচার এমনকি নেই দুঃখপ্রকাশ, নেই জবাবদিহিতা।কেবল রয়ে গেছে এক শীতল, নিষ্ঠুর, অবহেলাপূর্ণ নীরবতা।
যারা একসময় ক্ষমতায় ছিল, তারা ভাবত তারা আইনের ঊর্ধ্বে, নৈতিকতার বাইরে, আর তাদের স্পর্শ করতে পারবে না কোনো মায়ের কান্না, যিনি আজ নিঃশব্দে ঘুমান সন্তানের ছবি জড়িয়ে ধরে।
কিন্তু ইতিহাসের চোখ আছে। আর আমাদের স্মৃতি, তলোয়ারের চেয়েও ধারালো।
আমরা চাই ন্যায়বিচার, ন্যায়বিচার এবং ন্যায়বিচার:
-যে ছাত্রটি আর কোনোদিন বাসায় ফিরবে না—তার জন্য।
-যে মা-বাবা আজ চিরজীবনের শোক বয়ে বেড়াচ্ছেন—তাদের জন্য।
-যে স্বপ্নগুলো নিঃশেষ হয়ে গেছে বুটের নিচে—তার জন্য।
-আর প্রতিটি কণ্ঠস্বর, যা এখনো ভয়ে কাঁপে—তার জন্য।
ন্যায়বিচার কোনো প্রতিশোধ নয়:
-ন্যায়বিচার মানে স্মৃতিকে দায়িত্বের সঙ্গে ধারণ করা।
-এটি শুধু অপরাধীর সাজা নয়, নিরীহের সুরক্ষা নিশ্চিত করা।
-আমরা ন্যায়বিচার চাই অনুগ্রহ হিসেবে নয়, অধিকারের জায়গা থেকে।
-আমরা ন্যায়বিচার চাই ক্ষমার আশায় নয়, সত্যের দাবিতে।
-৩৬ জুলাই আমরা ভুলবো না।
-আমরা নিঃশব্দতাকে ক্ষমা করবো না।
-আমরা চুপ থাকবো না, যতক্ষণ না ন্যায়বিচার কেবল একটি শব্দ নয়, আমাদের বাস্তবতা হয়ে ওঠে।
-আমরা কখনোই ৩৬ জুলাই বিক্রি করবো না
🔥 ছাত্র-জনতার জন্য ন্যায়বিচার
🔥 জাতির জন্য ন্যায়বিচার
🔥 ৩৬ জুলাইয়ের জন্য ন্যায়বিচার
🔥 এখনই চাই—ন্যায়বিচার❤️🔥✊
ড: ফারজানা ইসলাম রুপা
এমডি, এমপিএইচ, পিএইচডি, পোস্ট-ডক্টরেট
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ
পাবলিক হেল্থ এ্যান্ড ইনফরমেটিকস বিভাগ
বাংলাদেশ মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএমইউ)।
মিরপুর ডিওএইচএস
ঢাকা।