মো. ইমরান হোসাইন, কর্ণফুলী (চট্টগ্রাম) প্রতিনিধি
‘মা-মারিয়ার হাত ধরে, মেষপালকের সাথে বিশ্বাসের পথে’ – এ মূলভাবকে প্রাতিপাদ্য করে খ্রিস্টযাগের মধ্য দিয়ে শুরু হওয়া মা-মারিয়ার তীর্থোৎসবের সুবর্ণ জয়ন্তী উৎসবের শেষ হয়েছে বিশ্বশান্তি ও মানব জাতির কল্যানের জন্য প্রার্থনার মাধ্যমে।
গত বৃহস্পতিবার ও শুক্রবার চট্টগ্রামের কর্ণফুলী উপজেলার বড়উঠান ইউনিয়নের মরিয়ম ধর্মপল্লীখ্যাত মরিয়ম আশ্রমে দুইদিনব্যাপী উৎসব অনুষ্ঠিত হয়।
আয়েজক সূত্রে জানা গেছে, এবারের উৎসবে যোগ দিয়েছেন দেশের নানা প্রান্তের খ্রিষ্টান সম্প্রদায়ের লোকজন। দুই দিনব্যাপী উৎসব উপলক্ষে দেয়াঙ পাহাড়ের আশ্রম ও আশপাশের এলাকা বর্ণিল সাজে সাজানো হয়। পুরো এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে উৎসবের আমেজে। উৎসবে প্রায় আট হাজার তীর্থযাত্রীর সমাগম হয়েছে এবারের তীর্থে।

আয়োজকেরা জানান, পবিত্র খ্রিস্টযাগের মধ্য দিয়ে শুরু হয় তীর্থোৎসবের মূল আনুষ্ঠানিকতা। পবিত্র খ্রিস্টযাগের পুরহিত্য করেন চট্টগ্রাম কাথলিক আর্চডাইয়োসিসের আর্চবিশপ সুব্রত লরেন্স হাওলাদার। পবিত্র খ্রিস্টযাগের পরে পবিত্র সাক্রামেন্তের আরাধনা, নিরাময় ও পুনর্মিলন অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেন খ্রিস্টভক্তরা। রাত নয়টার পর দেয়াঙয়ের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানে তীর্থযাত্রীরা প্রার্থনার মধ্য দিয়ে আলোক শোভাযাত্রায় অংশ নেন। দুইদিনব্যাপী উৎসবের শেষদিন শুক্রবার সকালে মহাখ্রিস্টযাগ উৎসর্গ করেন বরিশাল কাথলিক ডাইয়সিসের বিশপ ইম্মানুয়েল কানন রোজারিও। ওইসময় তীর্থযাত্রীরা ভক্তিপূর্ণ সময় অতিবাহিতের পাশাপাশি বিশ্বশান্তি ও মানব জাতির কল্যানের জন্য প্রার্থনা করেন।
জানা গেছে, ১৫১৮ খ্রিষ্টাব্দে চট্টগ্রামে পর্তুগিজ বণিকদের আগমনের সঙ্গে সঙ্গে পূর্ববঙ্গে খ্রিষ্ট বিশ্বাসেরও আগমন ঘটে। ১৫৩৭ খ্রিষ্টাব্দ থেকে পর্তুগিজ বণিকেরা চট্টগ্রামে স্থায়ীভাবে বসতি স্থাপন করেন। এরপর ১৫৯৮ সালে দক্ষিণ ভারতের কোচিন থেকে বাংলায় প্রথম মিশনারিরা আসেন। প্রথম মিশনারি জেজুইট ধর্মসংঘের পুরোহিত ফাদার ফ্রান্সেসকো ফার্নান্দেজ দেয়াঙয়ে পূর্ববঙ্গের প্রথম গির্জা নির্মাণ করেন ১৫৯৯ খ্রিষ্টাব্দে। ১৬০০ খ্রিষ্টাব্দে তিনি পাথরঘাটা বান্ডেল রোড ও জামালখানে দুটি গির্জা নির্মাণ করেন। প্রতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে মরিয়ম আশ্রমে খ্রিস্ট সম্প্রদায়ের মানুষের মিলনমেলা বসে মা মারিয়া তীর্থ উৎসবে। এবারও সম্মিলিত খ্রিস্টযাগে অংশ নেন হাজার হাজার বিভিন্ন বয়সী নারী-পুরুষ ও শিশু।
উৎসবে আসা ব্রিজেট ডায়েস বলেন, সারাদেশ থেকে আমাদের সম্প্রদায়ের আট হাজারের বেশি ভক্তরা এসেছেন। এমন আয়োজনে আসতে পেরে সত্যি অনেক ভালো লাগছে। আমাদের আশা একটাই বিশ্বশান্তি।
জানতে চাইলে চট্টগ্রাম কাথলিক আর্চডাইয়োসিসের পালকীয় সেবা দলের সেক্রেটারি ফ্লেভিয়ান ডি’কস্তা বলেন, দুইদিনব্যাপী উৎসবের সমাপনী দিনে শুক্রবার সকালে মহাখ্রিস্টযাগ উৎসর্গ করেন বরিশাল কাথলিক ডাইয়সিসের বিশপ ইম্মানুয়েল কানন রোজারিও। ওইসময় তীর্থযাত্রীরা ভক্তিপূর্ণ সময় অতিবাহিতের পাশাপাশি বিশ্বশান্তি ও মানব জাতির কল্যানের জন্য প্রার্থনা করেন।
তিনি আরও বলেন, এমন আয়োজনের জ খ্রীস্ট সম্প্রদায় পুরো বছর ধরে অপেক্ষা করেন।