পরিবারের ভরণ পোষণের জন্য লেফটেন্যান্ট জেনারেল মো. সাইফুল আলমের অর্থ ফেরত প্রদানের জন্য আবেদন করেছেন তার স্ত্রী লুবনা আফরোজ। গতকাল ২ মার্চ দুর্নীতি দমন কমিশন এর চেয়ারম্যান বরাবর এই আবেদন করেন।
লেফটেন্যান্ট জেনারেল মো: সাইফুল আলম (এলপিআর) এর স্ত্রী লুবনা আফরোজ স্বামীর বৈধভাবে অর্জিত এবং চার্জ প্রদেশ অর্থ ফেরত প্রদানের অনুরোধ জানিয়ে এই আবেদন করেন। আবেদনের একটি কপি পাবলিক টাইমেস কাছে এসেছে। নিচে আবেদনের বিস্তারিত তুলে ধরা হল-
সবিনয় নিবেদন এই যে, আমি লুবনা আফরোজ স্বামী: লেফটেন্যান্ট জেনারেল মো: সাইফুল আলম (এলপিআর) আমার পরিবারের আর্থিকভাবে বেঁচে থাকার জন্য একটি জরুরি বিষয় আপনার মানবিক সহায়তার প্রাপ্তির উদ্দেশ্যে উপস্থাপন করছি। উল্লেখ্য, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল গত ০৬ জানুয়ারী ২০২৫ ও আমার স্বামীর বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছে এবং এর পূর্বে ২০২৪ সালের নভেম্বর মাসের শেষ সপ্তাহে তার পাসপোর্টও বাতিল করা হয়েছে। পরিস্থিতির অনিশ্চয়তার কথা বিবেচনা করে, পরিবারের ভরণ পোষণ, সন্তানের শিক্ষার খরচ ও বয়স্ক পিতা-মাতার দেখভাল করার জন্য ব্যাংক থেকে তার সঞ্চয় তুলে আমাকে দিয়েছিলেন।

আমার স্বামীর অনির্দিষ্টকালের জন্য যে অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ এর সূচনা হয়েছে সেই প্রেক্ষাপট বিবেচনা করে আমার কাছে তার চাকরিজীবনের সকল সঞ্চয় রেখে যায়। আমাদের বেঁচে থাকার জন্য রেখে যাওয়া সমস্ত অর্থ গত ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ এ দুর্নীতি দমন কমিশন প্রতিনিধি কর্তৃক জব্দ করা হয়েছে। এখানে উল্লেখ্য যে দুদক প্রতিনিধির নিকট জব্দকালীন সময়ে ব্যাংক স্টেটমেন্ট ছাড়া প্রযোজনীয় সকল নথিপত্রাদি উপস্থাপন করা হয়েছিল। এছাড়াও দুদক প্রতিনিধির সামনে ব্যাংক ম্যানেজারের সাথে কথা বলা হলে তিনি নিশ্চিত করেছিলেন যে ব্যাংক স্টেটমেন্ট পরবর্তী কর্মদিবসে আমাকে প্রদান করবেন। তখন দুদক প্রতিনিধি আমাকে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। যে, প্রয়োজনীয় নথিপত্র উপস্থাপন করে আমি আমার স্বামীর বৈধভাবে অর্জিত অর্থ ফেরত পাবো। দুদক প্রতিনিধি সর্বমোট ২,৪২,৫০,০০০.০০ (দুই কোটি বিয়াল্লিশ লক্ষ পঞ্চাশ হাজার) টাকা আমার বাসায় পেয়েছিলেন, যা ব্যাংকে রক্ষিত এফডিআর একাউন্ট থেকে তোলা হয়েছে। একটি অনিশ্চিত ভবিষ্যতের মুখে আমাদের পরিবারের আর্থিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্যে আমার স্বামী কোন উপায় অন্তর না পেয়ে সঞ্চয়কৃত উক্ত টাকা ব্যাংক থেকে উত্তোলন করে আমার কাছে দিয়ে গিয়েছিলেন।
আমার স্বামী লেফটেন্যান্ট জেনারেল মো: সাইফুল আলম (এলপিআর) তার কর্মজীবনে নিষ্ঠা ও সততার সাথে দেশের সেবা করেছেন। বেতন, ভাতা এবং সুবিধা সহ তার চাকরিজীবনের আয় আইনগতভাবে অর্জিত এবং সরকারী নিয়ম অনুযায়ী সমস্ত কর যথাযথভাবে প্রদান করা হয়েছে। কমিশন কর্তৃক নিযে যাওয়া অর্থ সম্পূর্ণরূপে এই বৈধ উপার্জন থেকে প্রাপ্ত হয়েছে, যা তার আয়কর রেকর্ড, এফডিআর বিবৃতি এবং ব্যাঙ্ক লেনদেনের বিবরণের মাধ্যমে নিশ্চিত হওয়া যায়। আমরা এই অর্থের আইনি উৎস প্রতিষ্ঠার জন্য প্রয়োজনীয় সমস্ত নথি এই আবেদন পত্রের সাথে সংযুক্ত করেছি।
হঠাৎ করে আমাদের পরিবারের একমাত্র আর্থিক রিজার্ভ জন্ম হয়ে যাওয়ায় আমরা এখন এক ভয়াবহ পরিস্থিতিতে আছি। আমাদের দৈনন্দিন জীবনযাত্রার খরচ, গৃহস্থালির খরচ, চিকিৎসার প্রযোজন এবং সন্তানের শিক্ষার খরচ সংকুলান করতে প্রতিনিয়ত আর্থিক সহায়তা প্রয়োজন। এই অপ্রত্যাশিত ক্ষতির প্রেক্ষিতে জীবনের মৌলিক প্রয়োজনীয়তাগুলি পরিচালনা করতে আমি ব্যর্থ হয়ে পড়েছি। যেহেতু আমার স্বামী বর্তমানে অনির্দিষ্ট সময়ের জন্য এক অনিশ্চিত ভবিষ্যতে সাথে লড়াই করছে তাই পরিবারের সকল সদস্য এবং বৃদ্ধ বাবা মায়ের মৌলিক চাহিদা পূরণের নিমিত্তে আমার স্বামীর আইনত উপার্জিত এবং ট্যাক্স-প্রদেয় সঞ্চয় ফেরত প্রদানের জন্য বিনীত অনুরোধ জানাচ্ছি।
উপরের আলোকে, মহানের নিকট বিনীতভাবে আবেদন করছি যে, বর্তমানে আমাদের এই সংকটময় পরিস্থিতিতে পারিবারিক নিতা প্রযোজনীয় চাহিদা মেটানোর জন্য আমার স্বামীর জব্দকৃত বৈধভাবে অর্জিত অর্থ ফেরত প্রদানের মাধ্যমে সহায়তা করে আমাকে বাধিত করবেন। আপনার এই মহানুভবতার জন্য আমি এবং আমার পরিবার আপনার প্রতি চির কৃতজ্ঞ থাকবো।