চট্টগ্রামের কর্ণফুলীর বড়উঠানে শ্বাশুড়ির মৃত্যুর খবর শুনে একমাত্র পুত্র সন্তানকে নিয়ে বাড়ি ফিরছিলেন মা আইরিন নিগার (২৮)। গাড়িতে উঠে কিছুদির যাওয়ার পথেই বাস ও পাথরবোঝাই ডাম্প ট্রাকের সংঘর্ষে প্রাণ হারান ৭ মাসের একমাত্র সন্তান মোহাম্মদ আরহাম বিন নোমান ও তার মা আইরিন নিগার।
গতকাল সোমবার রাত সাড়ে ৩টার দিকে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের উপজেলার হারবাং ইউনিয়নের উত্তর গয়ালমারা এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে। এ দুর্ঘটনায় আহত হয়েছেন নিহতের আপন ছোট ভাই মোহাম্মদ আবির (১৭)।
নিহত আইরিন নিগার কর্ণফুলীর বড়উঠান ইউনিয়নের তিন নম্বর ওয়ার্ডের আলী আহমদ চেয়ারম্যানের পুরাতন বাড়ির মৃত হাফেজ হাজী শামসুলের পুত্র মোহাম্মদ নোমানুর রশিদের (৩৫) স্ত্রী।
নিহতের পারিবারিক ও স্থানীয়রা জানান, গত শনিবার (১৫ ফেব্রুয়ারি) কক্সবাজার রামু উপজেলার নিহতের পিতা মারা গেলে সন্তানকে নিয়ে বাবাকে দেখতে যান নিহত আইরিন। পিতার মৃত্যুর শোক কাটিয়ে উঠার জন্য স্বজনদের সাথে বাপের বাড়িতে থেকে যান সন্তানকে নিয়ে। গত সোমবার রাত বারোটার দিয়ে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে তার শ্বাশুড়ি ফাতেমা বেগম (৭০) মারা যায়। তার মৃত্যুর খবর শুনে তার ছোটভাইকে সঙ্গে নিয়ে স্বামীর বাড়িতে আসছিলেন তারা। আসার পথে চট্টগ্রামগামী বাস ও পাথরবোঝাই ডাম্প ট্রাকের সংঘর্ষে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের উপজেলার হারবাং ইউনিয়নের উত্তর গয়ালমারা এলাকায় এ দুর্ঘটনায় নিহত হন আইরিন নিগার (২৮)। এসময় গুরুতর আহত হন শিশু সন্তানসহ আরও সাতজন। আহতদের উদ্ধার করে স্থানীয় একটি হাসপাতালে নেওয়া হলে সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান সাত মাসের শিশু। আহত বাকি ৬ জনের পরিচয় পাওয়া যায়নি।
দুর্ঘটনায় স্ত্রী ও সন্তান নিহতের খবর পেয়ে দিশাহারা হয়ে পড়েন স্বামী মোহাম্মদ নোমানুর রশিদ (৩৫)। সকালে স্ত্রী ও সন্তানের লাশ বাড়িতে এনে কান্নায় ভেঙে পড়েন।
আহাজারি করতে করতে নিহতের স্বামী মোহাম্মদ নোমানুর রশিদ (৩৫) বলছিলেন, ‘মা, স্ত্রী-সন্তান গেলো, আমারে দেখার কেউ রইল না আর। মাকে দাফন করে ঘরে এসেই স্ত্রী-সন্তানকেও কবরে দিয়ে আসতে হলো।
কাঁপা কন্ঠে তিনি বলেন ‘মায়ের মৃত্যুর খবরে দ্রুত আসতে বলেছিলাম। তারা ফিরেছে ঠিক, তবে লাশ হয়ে। কিন্তু কেন? আমার সাজানো গোছানো সংসারের এই পরিনতি কেন? আমার স্ত্রী সন্তানদের এই পরিনতির জন্য দায়ি কে? আমি তাদের শাস্তি চাই। অন্যকিছু না।’
ছেলে ও স্ত্রীকে নিয়েই ছিল তাঁর সংসার। তাঁরা দুর্ঘটনায় মারা যাওয়ার পর তিনি একা হয়ে গেছেন। এক সঙ্গে পরিবারের তিনজনকে হারিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়ছিলেন তিনি।
প্রতিবেশী যুবদল নেতা এসএম খোরশেদুল ইসলাম জানান, কিছুদিন আগে নোমানুর রশিদের শ্বশুর মারা গেলে, সেখানে তার স্ত্রী সন্তান যায়। রাতে শ্বাশুড়ির মৃত্যুর খবর শুনে বাড়িতে আসছিলেন তারা। ক’দিন আগেও স্ত্রী সন্তানদের প্রাণচাঞ্চল্যতায় মুখরিত ছিল যে বাড়ির আঙিনা, সেই ভিটে মাটিতে চলছে শোকের মাতম। বাড়ির দেয়ালে দেয়ালে যেন পড়েছে শোকের আস্তরণ।
নিহতের ভাসুর আমিনুল রশিদ বলেন, সোমবার সকাল দশটায় মায়ের জানাজা শেষে দাফর করা হয়। এরপর দুপুরে ছোটভাইয়ের স্ত্রী ও তার সন্তানকে দাফন সম্পন্ন হয়।
এঘটনায় রামু চিরিংগা হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আরিফুল আমিন বলেন, ‘দুর্ঘটনাকবলিত গাড়ি দুটি জব্দ করেছে পুলিশ। আইনীপ্রক্রিয়া শেষে লাশ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। পরবর্তী আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।’