চট্টগ্রামের আনোয়ারা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ইনজেকশন পুশ করার পরই মোহাম্মদ ইফতেখার (১২) নামে এক কিশোরের মৃত্যু হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন স্বজনরা। ঘটনায় পর দায়িত্বরত শিশু ওয়ার্ডের চিকিৎসক ও নার্স গা ঢাকা দিয়েছেন।
বুধবার (৯ এপ্রিল) দুপুর একটার দিকে আনোয়ারা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের দ্বিতীয় তলার শিশু ওয়ার্ডে এঘটনা ঘটে। ইফতেখার উপজেলার হাইলধর ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের মাইজপাড়া নাজিম চেয়ারম্যানের বাড়ির মোহাম্মদ ইসহাক মিয়ার ছেলে। সে হাইলধর পীরখাইন মৌলানা আসরাফ আলী চৌধুরী উচ্চ বিদ্যালয়ের ৬ষ্ঠ শ্রেণীর শিক্ষার্থী।
পরিবারের দুই বোন এক ভাইয়ের মধ্যে ইফতেখার সবার ছোট। ঘটনার পর হাসপাতালে নিহতের স্বজন ও স্থানীয়রা ভিড় করলে হাসপাতালে পুলিশ মোতায়েন করা হয়।
নিহত কিশোরের বাবা মোহাম্মদ ইসহাক মিয়া বলেন, বুধবার দুপুরে আমার ছেলের শ^াসকস্ট নিয়ে নিজে পায়ে হেঁটে হাসপাতালে এসেছে আমার সঙ্গে। প্রথমে বর্হিবিভাগে চিকিৎসকের পরামর্শে বাহিরের ফার্মেসী থেকে একটি ইনজেকশন নিয়ে দ্বিতীয় তলায় শিশু ওয়ার্ডে আসি। সেখানে চিকিৎসক ও নার্স ইনজেকশন পুশ করার সঙ্গে-সঙ্গে বমি করে। ইনজেকশন পুশ করার কিছুক্ষণের মধ্যেই আস্তে আস্তে নিন্তেজ হয়ে মারা যায়। তিনি আরও বলেন, ‘চিকিৎসকের ভুল চিকিৎসার আমার ছেলের মৃত্যু হয়েছে। আমার একমাত্র ছেলের মৃত্যুর বিচার দাবী করছি।’
একমাত্র ভাইকে হারিয়ে হাসপাতালে আহাজারী করেন ইফতেখারের দুইবোন সানজু ও আরজু। তাদের বিলাপে ভারী হয়ে উঠে পুরো হাসপাতাল। তারা বলেন, ‘চিকিৎসক ও নার্সের অবহেলার কারণে এ ঘটনা। ইনজেকশন পুশ করার পর যখন আমার ভাইয়ের বমি হয় নার্স তখনই তার শরীর থেকে ইনজেকশন খুলে চলে যায়। সে আস্তে আস্তে নিন্তেজ হয়ে মারা যায়।’
স্থানীয়রা জানান, এ হাসপাতালের চিকিৎসরা প্রতিদিন দুপুর গড়াতেই উপজেলার বিভিন্ন অবৈধ ক্লিনিক ও ল্যাবে চেম্বার করার জন্য চলে যান। দুপুরের পর নার্সরাই হাসপাতালে চিকিৎসা প্রদান করে। এছাড়াও হাসপাতালের প্রধান কর্মকর্তাও অবৈধ ক্লিনিক ও ল্যাবে চেম্বারে চিকিৎসা নিয়ে ব্যস্ত থাকেন বলে জানান।
জানতে চাইলে আনোয়ারা স্বাস্থ্য ও পরিবার কর্মকর্তা ডা. মাহতাব উদ্দিন চৌধুরী বলেন, ‘শিশুটি ঈদের আগে ২২ মার্চ অসুস্থ থাকায় ভর্তি হয়েছিল হাসপাতালে। দুইদিনপর সুস্থ হয়ে বাড়ি চলে যায়। বুধবার দুপুরে হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসলে শিশু বিশেষজ্ঞ ডা. মোহাম্মদ রুবেলের তত্ত্বাবধানে চিকিৎসা নেওয়া অবস্থায় মারা যায়। মৃত্যুরপর তার স্বজনরা ভুল চিকিৎসার অভিযোগ তুলছেন।
বিষয়টি আমরা উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি এবং তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
আনোয়ারা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মনির হোসেন বলেন, ‘হাসপাতালে চিকিৎসকের ভুল চিকিৎসায় কিশোরের মৃত্যুর খবর শুনেছি। হাসপাতালে পুলিশ পাঠানো হয়েছে। এঘটনায় অভিযোগ পেলে পরবর্তী আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’